Home > Blog > সাফল্য ও কল্যাণের জন্যেই ব্যয় করব আমার দিনের প্রতিটি মুহূর্ত


কোয়ান্টাম
মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ মার্চ ‘২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল, লিড আইটি বিজনেস এ্যানালিষ্ট জনাব মোঃ রকিবুর রহমান। বর্তমান সময়ে ব্যাপকহারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে মুক্তির প্রার্থনায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিশেষ মেডিটেশন “প্রার্থনার মেডিটেশন” দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান । 

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপিকা এবং কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি ইউএসএ এর সম্মানিত দায়িত্বশীল ড.ইশরাত জাকিয়া সুলতানা। তিনি বাংলাদেশ থেকে ভিডিও স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার বিষয় ছিল : সাফল্য ও কল্যাণের জন্যেই ব্যয় করব আমার দিনের প্রতিটি মুহূর্ত

সময় পরমকরুণাময়ের দেয়া অসাধারণ একটি উপহার। এই সময়কে আরো অসাধারণ করে তোলার জন্যে কল্যাণকর কাজ করার গুরুত্ব তুলে করে আলোচক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা বলেন, ইচ্ছে করলেই আমরা সময়কে থামাতে পারিনা। তাই বুদ্ধিমানের লক্ষ্মণ হচ্ছে, সময়কে কিছু কাজ দিয়ে স্মরণীয় করে রাখা। সঠিক পন্থায় ব্যয় করা। তা নাহলে কী হবে? সময়ের অপব্যয় হবে, সময়টা নষ্ঠ হবে। এ জন্যে আমাদেরকে পরে হায়-আফসোস করতে হবে।

সময়ের মূল্য বুঝাতে গিয়ে ড.ইশরাত  জাকিয়া সুলতানা বলেন,  এক বছর সময়ের মূল্য কত, তা সেই শিক্ষার্থীই অনুধাবন করতে পারে, যার একটি গ্রেড অকৃতকার্য হওয়ায় এক বছর নষ্ট হয়েছে। এক মাস সময়ের মূল্য সেই মা-ই ভালোভাবে জানেন, যিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেয়া এক অপরিণত শিশুর মা হয়েছেন। এক সপ্তাহ সময়ের মূল্য সেই সম্পাদক ভালোভাবে জানেন, যাকে এক সপ্তাহের মাথায় একটি পত্রিকা বের করতে হয়। একদিনের মূল্য বুঝতে চান? একজন দিনমজুরকে জিজ্ঞাসা করুন যার বাড়িতে অভুক্ত শিশু রয়েছে। এক মিনিটের জন্যে যে ট্রেন মিস করল সেই বলতে পারবে, এক মিনিট তার কাছে কত মূল্যবান। এক সেকেন্ডের গুরুত্ব তার চেয়ে আর কে ভালোভাবে বুঝতে পারে যে এক সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন। আর এক মিলি সেকেন্ড সময়ের মূল্য সেই জানে যে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের হেরফের হওয়ার প্রতিযোগিতায় সোনা মিস করে রৌপ্য পদক পেয়েছেন।

যারা জীবনে সময়ের সঠিক ব্যবহার করে স্মরণীয় হয়েছেন তাদের কথা উল্লেখ করে আলোচক বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার লিখেছিলেন, আমি এক জীবনে দুই জীবনের কাজ করে গেলাম। লেখাটা পড়লেই বোঝা যায় কত তৃপ্তিময় একটি জীবন ছিল তার এবং সময়কে কতটা নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করেছেন! তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠতেন। উঠেই আধ ঘণ্টা নীরবে ধ্যানমগ্ন হতেন এবং তারপর লিখতে বসতেন। কখনো দুপুরে ঘুমানো বা বিছানায় গড়াগড়ি দেয়ার অভ্যাস ছিল না তার। আশি বছর বয়স পর্যন্ত লিখে গেছেন। কখনো অবসর নেন নি।

ধর্মের শিক্ষা উল্লেখ করে আলোচক বলে, তিরমিজী শরীফের একটি হাদীস হচ্ছে, শেষ বিচারের দিনে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তার একটি হলো-সময়কে কীভাবে ব্যয় করেছ। আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচক বলেন আসুন, আমরা আমাদের কাজ গুলির একটা রুটিন করে ফেলি। কাজগুলোকে লিখতে লিখতে মনে মনে বলি-আজ দিনের প্রতিটি কাজ গুরুত্বপূর্ন। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আজ যা করব, তা ভালোর জন্যে করব। কল্যাণের জন্যে করব। সাফল্যের জন্যে করব। তিনি আরো বলেন, আমরা কেউই জানি না, কার যাওয়ার সময় কবে, কখন। তাই আমাদের উচিত সময়ের মূল্যায়ন করা সঠিক ভাবে ব্যয় করা। দয়া করে বাদ দিন না অহেতুক টেপাটিপি। বাদ দিন না লম্বা সময় ধরে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা। ইউটিউবে একের পর রান্নার ভিডিও দেখা। আপনি যেভাবে রান্না করছেন, সেই মশলার সাথে শুধু মমতা ও মনোযোগ দিন, সামান্য আলু ভাজি খেয়ে দেখবেন সবাই বলছেন বাহ্, মজা হয়েছে। পরিবারে শুদ্ধাচারের চর্চা করুণ। মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আমাদের মূল কাজ হচ্ছে-সৎকর্ম করা। এমন কাজ করা যা নিজের জন্যে কল্যাণকর। মানুষের জন্যে কল্যাণকর। প্রতিটি দিনের প্রতিটি কাজই সৎকর্ম হয়ে যেতে পারে যদি আমাদের নিয়ত থাকে কল্যাণ করার। নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমরা চাইলে অন্যের জন্যেও কিছু না কিছু করতেই পারি। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে অনেক সেবা কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা যেন নিজেরা এগিয়ে এসে এইসব সেবাকাজে শরিক হই। পরম করুণাময় আমাদেরকে সেবা করার মানসিকতা, সেই সুযোগ ও সামর্থ দান করেন এবং সময়ের সৎ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনকে মহীয়ান করতে পারি, এই প্রার্থনা করে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের ৫২জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.  
উল্লেক্ষ্য,  আগামী শনিবার, ২৮ মার্চ ‘২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : শুদ্ধাচার চর্চার শুরু হোক পরিবার থেকে রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।