Home > Blog > পরিবারে সালাম চর্চা বাড়ায় পাস্পরিক একাত্মতা

কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ৭ মার্চ ‘২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময়সকাল ১০টায় শুরু হওয়া  প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির  দায়িত্বশীল ইয়র্ক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মেহজাবিন আহমেদ। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল, জনাব মোঃ এমদাদ উল্লাহ ভূঁইয়া। আলোচনার বিষয় ছিল :“পরিবারে সালাম চর্চা বাড়ায় পাস্পরিক একাত্মতা”

পবিত্র কোরআনে সূরা হুদ-এ আল্লাহ বলেন, “হে নূহ ! জাহাজ থেকে নেমে পড়ো। আমার তরফ থেকে সালাম। বরকতে পূর্ণ হবে তোমার ও তোমার সাথে অবতরণকারীদের জীবন”। আমরা জানি নূহ (আঃ) এর সেই বিশাল নৌকা ও মহাপ্লাবনের ঘটনা। যখন প্লাবন থেমে গেল, পানি নেমে গেল, মাটি দেখা গেল, তখন মহান আল্লাহ নূহ নবী ও তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে সালাম জানিয়েছেন এবং তাদের জীবনে বরকত দান করেছেন। কোরআনের এই বাণী ও ঘটনা উল্লেখ করে এবং পরম করুণাময় আমাদের সবার জীবনে বরকত দিন-এ প্রার্থনা করেই আলোচক আলোচনা শুরু করেন।

সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচক বলেন, সালাম মানে কি? অন্যের জন্যে শান্তি কামনা করা। সালামের পুরো বাক্যটি হলো- আসসালামু আলাইকুম। বাংলায় বললে-আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। সব কথার সেরা কথা এটি। এই কথাটি শুধু শান্তিকামনা করে না, এ কথার মধ্য দিয়ে সুখ সৃষ্টি হয়, পরস্পরের প্রতি সমমর্মিতা বাড়ে। আর শান্তি, সুখ, সমমর্মিতার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবারে। আসলে পরিবার খুব শক্ত একটি খুঁটি প্রতিটি মানুষের জীবনে। উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার, নিত্যনতুন যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার-এ সবই আমাদের জীবনে কাজের জন্যে প্রয়োজন। কিন্তু শান্তির জন্যে প্রয়োজন পরিবার। প্রয়োজন পারিবারিক সম্পর্ক। আবহমানকাল ধরে প্রাচ্যের, বিশেষত আমাদের একটি বড় গর্বের বিষয় হলো পরিবার। স্থুল ভোগবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসনে পড়ে পাশ্চাত্যের পরিবারগুলো বহুকাল ধরেই বিপর্যস্ত। যার ফলাফল ওদের আজকের ক্রমবর্ধমান সামাজিক জটিলতা, হিংস্র অপরাধপ্রবণ মনোবৃত্তি আর স্নায়ুবিক-মানসিক অসুস্থতা। যে কারণে পাশ্চাত্যের পরিবারগুলো আজ সত্যিকার অর্থেই ভাঙনের মুখে। সে বিবেচনায় আমরা এখনো ভাগ্যবান। যদিও ভুল দৃষ্টিভঙ্গি, ভায়োলেন্সপূর্ণ টিভি সিরিয়াল, অসুস্থ বিনোদন, ভার্চুয়াল ভাইরাস আর আর্থ-সামাজিক নানা কারণে আমাদের পরিবারগুলো একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। বাড়ছে স্বামী-স্ত্রী আর অভিভাবক-সন্তানের মধ্যে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি আর অকারণ দূরত্ব। এ থেকে মুক্তির জন্যে কিছু একটা তো করতে হবে আমাদের সচেতন কাউকে না কাউকে। আর কোয়ান্টাম অনেক দিন থেকেই বলে আসছে যে, পরিবার বাঁচলে সমাজ বাঁচবে, সমাজ বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে বাঁচানোর জন্যে আগে আমাদের পরিবারগুলোকে বাঁচাতে হবে। পরিবারের বন্ধনকে অটুট করতে পারে একমাত্র শান্তি, সুখ আর পারস্পরিক সমমর্মিতা। এজন্যেই আমাদের পরিবার পরিজনদের প্রতি প্রথম করণীয় হচ্ছে সালাম চর্চা। নিজে আগে হাসিমুখে সালাম দেয়া এবং সালাম পেলে হাসিমুখে তার উত্তর দেয়া। তিনি বয়সে যত বড় বা ছোট হোন না কেন। নবীজী (সঃ) ছোটদের আগে সালাম দিতেন। এজন্যে সবচেয়ে ভালো হয় পরিবারের যে পর্যায়ের সদস্য হই না কেন, আমি আগে সালাম দেবো-এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত সবসময়। আলোচক আরো বলেন, সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি হতে পারে সালাম বিনিময়। কারো সাথে ভুল বোঝাবুঝি বা কথা কাটাকাটি হয়েছে? সমঝোতার পথ তৈরী করতে চাচ্ছেন? হাসিমুখে সালাম দিয়ে নিজেই এগিয়ে যান। দেখবেন পুরো পরিবেশই বদলে গেছে। স্বামী/স্ত্রী বা ভাই/বোন অভিমান করে আছেন ?আপনিও আরেকদিকে মুখ করে বসে থাকবেন না।  আপনি বাসায় ফিরে সালাম দিন। দেখবেন, কত চমৎকারভাবে পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমরা সবাই যদি পরস্পরকে সালাম দেই, সবাই যদি সবার শান্তি কামনা করি তাহলে অশান্তি থাকবেটা কোথায়? অশান্তি তো পালিয়ে যাবে। সুখী মমতাময় পারিবারিক আবহ সৃষ্টির জন্যে একটি অনবদ্য উপায় হতে পারে এই সালাম। এই কল্যাণ কামনা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সালাম বিনিময় হতে পারে একটি সুন্দর পারিবারিক সংস্কৃতি।  এ জন্যে আমরা মা-বাবারা ছেলেমেয়েদেরকে আগে সালাম দিবো। তা হলে কি হবে ? তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে যে, না বাবা তো আমাকে সালাম দিয়েছেন, আমাকে তো বাবাকে আগে সালাম দিতে হবে। দেখা যাবে, তারা আমাদেরকে আগে সালাম দিয়ে ফেলছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রতিদিন হাসিমুখে এই কল্যাণকামনা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমাদের পরিবারগুলোতে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। পরিবার হবে আমাদের সুখের নীড়, শান্তির উৎস। পরম করুণাময় যেন আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করেন, এবং আমাদের সবার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একাত্মতা বাড়িয়ে দিন বহু গুণে, এই প্রার্থনা রেখে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।

মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের ৫১ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.  

উল্লেক্ষ্য,  আগামী শনিবার, ১৪ মার্চ ‘২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “সমস্যার সাথে টেনশন নয়, মেডিটেশনকে যুক্ত করে সমাধান করব”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।