কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ মার্চ ‘২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময়সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল ও ক্যাপিটাল ওয়ান ব্যাংকের সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জনাব মোঃ সাইফুল আলম। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল ইয়র্ক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মেহজাবিন আহমেদ। আলোচনার বিষয় ছিল :”সমস্যার সাথে টেনশন নয়, মেডিটেশনকে যুক্ত করে সমাধান করব”।
শিশুবেলা থেকে মেডিটেশন করে সফল হয়েছেন এমন কয়েকজন শিশু ও শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মেহজাবিন আহমেদ বলেন, এদের মতো আরো শিশু, কোয়ান্টাম পরিবারে যারা বেড়ে উঠেছে, তারা এখন জানে যে কোনো পরিস্থিতে সামাল দেয়ার জন্যে কী করতে হবে। শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি শিশু যেন এমন বুদ্ধিমান হয়। কারণ জীবনে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ন। কখন কী করতে হবে তা বুঝতে পারা এবং সেটি বিশ্বাস নিয়ে করা এবং তারপর কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা। এভাবেই তো সমস্যার সমাধান করতে হয়, এভাবেই তো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। কারণ, সমস্যায় পড়ে দুশ্চিন্তা করে আমরা কেউ কি জীবনে একটি ঘণ্টা যোগ করতে পারি? পারি না। দুশ্চিন্তা তো আমাদেরকে ভালো কিছু দিতে পারে না। তাহলে তা করে লাভ কী? সেজন্যেই আজকের আলোচনার মূল বক্তব্য এটিই যে, সমাধান করতে চাইলে কোনো সমস্যার প্রেক্ষিতে টেনশন না করে মেডিটেশন করা।
মেডিটেশন কিভাবে কাজ করে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আলোচক বলেন- বিশিষ্ট গবেষক ডা.রিচার্ড ডেবিটসন গবেষণা করে দেখেছেন যে, যেসব মানুষ নেতিবাচক চিন্তা ও দুশ্চিন্তায় অভ্যস্ত তাদের ব্রেনের ডানদিকের প্রি-ফ্রন্টাল করটেক্স বেশি কাজ করে। যারা বেশি উদ্যমী, আগ্রহী, সুখী, আত্মতৃপ্ত তাদের বামদিকের প্রি-ফ্রন্টাল করটেক্স বেশি কাজ করে।মেডিটেশন ব্রেনের কাজকে ডানদিকের এই দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, নেতিচিন্তা থেকে সরিয়ে বামদিকের ইতিবাচক, সুখী, আত্মবিশ্বাস, উদ্যমী অংশে নিয়ে যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় মেডিটেশন মানুষকে দুশ্চিন্তার পরিবর্তে প্রশান্ত, আত্মতৃপ্ত, সুখী ও সুচিন্তায় অভ্যস্ত করে তোলে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে আলোচিত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ম্যাথু রিকার্ড ৩৫ বছর ধরে মেডিটেশন চর্চা করছেন। গবেষণাকালে ২৫৬টি ইলেকট্রোড দিয়ে বিজ্ঞানীরা তার পুরো মাথাটাকে মুড়িয়ে ফেলেছিলেন। সীমাহীন উৎসাহ নিয়ে তারা রিকার্ডের ব্রেনের ওপর মেডিটেশনের প্রভাব অনুসন্ধান করতে থাকেন। গবেষণায় যা বেরিয়ে এসেছে তা চমকপ্রদ। তার ব্রেনের বামদিকের প্রি-ফ্রন্টাল করটেক্স অত্যন্ত সুতীক্ষ্ণ। এজন্যেই তিনি সুখী হতে পেরেছেন। নিয়মিত মেডিটেশনের ফলে সুখের দৃষ্টিভঙ্গি তার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। সুখী মানুষ ম্যাথু রিকার্ড বলেন, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটে চলেছে তা কিন্তু আমাদের দুঃখের কারণ নয়, বরং এসব ঘটনায় আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি তা-ই আমাদের দুঃখের কারণ। আসলে সমস্যায় পড়লে সাধারণত আমাদের মধ্যে কী হয়? অস্থিরতা, তাৎক্ষনিক সমাধান পেতে আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। উত্তেজনা, অস্থিরতা যত বাড়ে সমস্যা আরো প্রকট হতে শুরু করে। যেমন, সুতা যখন জট পাকাতে শুরু করে মাত্র তখন যদি হুলুস্থল করে এদিক-সেদিক টেনে জট ছাড়াতে যান, দেখবেন যে আরো বেশি জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কী করলে জট ছাড়ানো যেত? জটের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে, সেখানে মনোযোগ দিলে। মেডিটেশন কী করে? মনটাকে পরিষ্কার করে নেতিচিন্তা থেকে, অহেতুক বিপদ কল্পনা থেকে। শুদ্ধ অন্তর, সুখী মন তখন সমাধানের সূত্রকে স্বাগত জানানোর জন্যে প্রস্তুত হয়। নতুন ধারণা, নতুন উপলদ্ধি, নতুন সত্য, নতুন পথ সে খুঁজে পায়। মন তাকে বলে দেয়, এই তো মুক্তির পথ, এইতো সংশোধনের পথ। দুশ্চিন্তা কোনো কারণ নেই। উপায় আছেই আছে। এই যে আশা-এটিই তখন আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে, আরো কাজ করতে, আরো এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, মেডিটেশন আমাদেরকে প্রশান্ত রেখে সঠিক জায়গায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।পরিশেষে মেহজাবিন আহমেদ বলেন, পানিতে হাবুডুবুর জন্যে ট্রেনিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু পানিতে ভেসে থাকার জন্যে ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন। নিয়মিত মেডিটেশন করার মধ্য দিয়ে আপনি এই জীবনকে সহজ ও গতিময় করার সূত্র পাবেন। প্রত্যেকটা যুগেরই কিছু সমস্যা, নিজস্ব যন্ত্রনা রয়েছে, নিজস্ব কষ্ট রয়েছে এবং সেই যুগের আলোকেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিয়মিত মেডিটেশন করার মাধ্যমে যে কোনো কেউ জীবনের সত্যকে বুঝতে পারবেন। উপলদ্ধি করতে পারবেন এবং সমস্যার জট খুলতে পারবেন, সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাই আসুন, নিয়মিত মেডিটেশন করুন। সমস্যার জট উপড়ে ফেলুন। আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে টেনশনমুক্ত এক সফল জীবন। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে সুস্বাস্থ্য এবং প্রশান্তময় সফল জীবন দান করুন। এই প্রার্থনা রেখে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের ৬১জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ২১ মার্চ ‘২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “সাফল্য ও কল্যাণের জন্যেই ব্যয় করব আমার দিনের প্রতিটি মুহূর্ত” রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।