কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি ইউএসএর নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন ও বিশেষ দাতা ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় জ্যামাইকায় কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির কার্যালয়ে এই সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সঞ্চালক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল মো. এমদাদ উল্লাহ ভূঁইয়া। আলোচনার বিষয় ছিল—‘সংঘবদ্ধ দানে বহমান থাকে কল্যাণের স্রোতোধারা’।
আলোচক দানের কল্যাণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, দান এই জন্য করব যে, দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে। পাপ মোচন করে ও দাতার অন্তরে তৃপ্তি আনে। রোগব্যাধি দূর করে। ভয়ভীতি, টেনশন ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে। দারিদ্র্য বিমোচন করে ও সম্পদে বরকত আনে। দান জীবনে কল্যাণের স্রোতোধারাকে বহমান রাখে, সাফল্যকে আকৃষ্ট করে। আর এ জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ দান। আমরা একা একবেলা একজন ক্ষুধার্তের ক্ষুধা মোচন করতে পারি। কিন্তু একক প্রচেষ্টায় অভাবমুক্ত আলোকিত একটি জনপদ গড়ে তুলতে পারি কি? পারি না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা আর বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে একটু একটু করে সিন্ধুর জন্ম। মনে রাখবেন, দ্রুত পথ চলতে গেলে এক চলাই উত্তম, কিন্তু অনেক দূর যেতে চাইলে সবাই মিলে চলতে হয়। ইতিহাস সাক্ষী, বড় কোনো কাজ, বিশাল কোনো পরিবর্তন বা নতুন কোনো সভ্যতার ভিত্তি তখনই গড়ে উঠেছে যখন সেটা শুরু হয়েছে সংঘবদ্ধভাবে। তাই আমরা কোয়ান্টামে বলি, মানুষ একা থাকলে সে হয় ব্যক্তি, আর যখন সংঘবদ্ধ হয় তখন হয় শক্তি।
আলোচক বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাজের দিকে তাকান, আপনাদের দানের অর্থে গড়ে উঠেছে বিকশিত ধ্যান ও জ্ঞানের নগরী—কোয়ান্টাম। ২০০১ সাল, ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। একচালা ঘরের একটি রুমে কাঠের বেঞ্চিতে বসে লেখাপড়া করছে সাতটি শিশু। সাতটি শিশুর একজন সুমথং। আজ খুলনা মেডিকেল কলেজের একজন ডাক্তার তিনি। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরের সাত শিশুকে নিয়ে কোয়ান্টামে শিশু কাননের যাত্রা। আজ আড়াই হাজার শিশুর কলকাকলিতে মুখরিত কোয়ান্টাম। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছে। এ বছর যুক্ত হয়েছে আরও একটি নতুন ক্যাম্পাস, আরও নতুন এক হাজার শিশু। আপনার আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানেই আলোকিত হচ্ছে এই শিশুদের জীবন। দানের সঙ্গে জড়িত আমাদের ভালোবাসা আর দোয়ায় তাঁরা ভর্তি হচ্ছে দেশ সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিকেল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কল্যাণের এই স্রোতোধারা বহমান রাখতে করণীয় সম্পর্কে আলোচক বলেন, আমরা নিজেরা নিয়মিত দান করব এবং অন্যদের দানে উৎসাহিত করব। কোথায় দান করলে সেটা সৎ দান হবে তা অনেকেই জানে না। আমরা যদি তাঁদের সংঘবদ্ধ সৎ দানের প্রতিদান সম্পর্কে না বোঝাতে পারি তবে স্রষ্টার কাছে সেই দায়বদ্ধতা আমাদেরই। তাই, যারা জানে না কিন্তু সামর্থ্য ও সদিচ্ছা রয়েছে, তাঁদের এই কল্যাণের অংশীদার করতেই এ কাজটি আমাদের করতে হবে।
পরিশেষে আলোচক বলেন, আসুন অন্যের কল্যাণে যতটুকু করা সম্ভব তা যত ক্ষুদ্র আকারেই হোক না কেন আজই তা শুরু করি। পরম করুণাময়ের করুণাধারায় সিক্ত হোক সবার জীবন।
অনুষ্ঠানে মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ পরিচালনা করেন এতিমান নামে একটি চমৎকার অ্যাক্টিভিটি। সবাই এতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নেন। দানের সাফল্য নিয়ে অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন মো. হেদায়েত উল্লাহ ও শাকিরা আলম।
আলোচনার পাশাপাশি কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মেডিটেশন সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আমেরিকার সাতটি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট পাঁচটি দেশের ৭২ জন অতিথি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যে কেউ ঘরে বসে বিনা মূল্যে এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারেন। অনলাইনে অংশ নিতে ভিজিট করুন qms-usa. org/sadakayon ওয়েবসাইটে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় জ্যামাইকা কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হলে (৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট-বি ই) পরবর্তী সাদাকায়নের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয়—‘পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা’।