কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ মার্চ ‘২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময়সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল, লিড আইটি বিজনেস এ্যানালিষ্ট জনাব মোঃ রকিবুর রহমান। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন ঢাকা মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সেলিম সাজ্জাদ। আলোচনার বিষয় ছিল : “শুদ্ধাচার চর্চার শুরু হোক পরিবার থেকে“।
শুরুতে সঞ্চালক রকিবুর রহমান বলেন, দ্রুত বাড়ছে এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। এমন পরিস্থিতিতে এই ভয় বা আশঙ্কা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসকরা। বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে আতঙ্কিত হওয়া, ভয় পাওয়া, অবসাদে ভোগা, রেগে যাওয়া, হতাশ হয়ে যাওয়া, এগুলো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যিনি আতঙ্কিত হবেন, উদ্বিগ্ন হবেন, যার মধ্যে মানসিক চাপ বেশি থাকবে, তিনি কিন্তু সহজে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন। সুতরাং আমরা যদি খুব আতঙ্কগ্রস্ত হই, উদ্বিগ্ন হই, তাতে আমাদের কোনো লাভ নেই। যেহেতু এই পরিস্থিতি আমরা কোনোভাবে এড়িয়ে যেতে পারব না। এই চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে মানসিক শক্তি দিয়ে। এবং সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপশি শুদ্ধাচার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব।
আর মানসিক শক্তি জোগাতে আমাদের সাহায্য করবে মেডিটেশন। পরিবারের সবাই একাত্ম থেকে আমাদের মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিশেষ মেডিটেশন “আমার পরিবার” দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি । করোনোভাইরাস আমাদের সবাইকে পরিবারের সাথে একসাথে কিছুটা সময় কাটাবার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই নিজের ও নিজের পরিবারের সুস্থতা, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত এবং চিন্তিত। এই সুযোগে আমরা আরো বেশী মনোযোগী হতে পারি পরিবারের প্রতি। আরো বেশী সমমর্মী হওয়ার সুযোগটি আমরা গ্রহণ করতে পারি। তা হতে পারে পারিবারিক শুদ্ধাচার চর্চার মাধমে।
আলোচনা পর্বে আলোচক সেলিম সাজ্জাদ বলেন, পরিবারে শুদ্ধাচার অতীব গুরুত্ব পূর্ণ। কেন? আমাদের পরিবার গুলি আজ ভাঙ্গনের মুখে। কমে গেছে একের প্রতি একের শ্রদ্ধাবোধ-মমতাবোধ। ভোগবাদীএই সমাজ ব্যবস্থায় আমরা এক ঘরে বসবাস করছি ঠিকই, কিন্তু কেমন জানি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। যে যার ঘরে, যার যার মত করে। বাহ্যিক ভাবে আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে অনেক। বেড়েছে অনেক ভোগ্য উপকরণ ঠিকই। কিন্তু বেড়েছে অনেক জটিলতা। নৈতিক অবক্ষয় এখন সব খানে, মূল্যবোধের বড়ই অভাব, পারিবারিক শিষ্টাচার নেই বললেই চলে।পত্রিকার পাতা খুলেই আমরা দেখতে পাই। কমে যাচ্ছে ভালো মানুষের সংখ্যা। এই ভাল মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু কিভাবে? আমাদের শুদ্ধাচারী হতে হবে। এবং শুদ্ধাচার এর চর্চার শুরু করতে হতে হবে পরিবার থেকে। কারণ, পরিবার ভালো তো সমাজ ভালো, সমাজ ভালো হলে দেশ ভালো হবে। শুরু করতে হতে হবে পরিবার থেকে। এর পর আলোচক বলেন ভালো মানুষ মানে শুদ্ধাচারী মানুষ। শুদ্ধাচার মানে যা শুদ্ধ, পাপ পঙ্কিলতা মুক্ত, ন্যায়, সত্য, কল্যানকর এবং মানবিক। কিভাবে একজন মানুষ শুদ্ধাচারী হতে পারবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করেন আলোচক। এবং আরো বিস্তারিত জানার জন্যে শুদ্ধাচার বইটির সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন। বইটি কোয়ান্টামের ওয়েব সাইট এ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।
আরো সম্প্রচার করা হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্নধার শ্রদ্ধেয় গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক এর বিশেষ অডিও স্পিচ “করোনা সংক্রমণ : প্রচার ও বাস্তবতা || কোয়ারেন্টিন : নতুন উপলব্ধির পথ“। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ। তিনি করোনোভাইরাসের এই দুর্যোগের মুহূর্তে সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহব্বান জানান। এবং এই ভাইরাসের মোকাবেলায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে বিশেষ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেন। পরিবারের সদস্যরা এবং প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনার আমার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের ৮৩জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ৪ এপ্রিল’২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে :“বর্তমান ও বাস্তবতা: আমাদের করণীয়”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।