কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারী’২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল, লিড আইটি বিজনেস এ্যানালিষ্ট জনাব মোঃ রকিবুর রহমান। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল জনাবা শাহানা আক্তার। আলোচনার বিষয় ছিল :“পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা, পরিবারের প্রতি ভালবাসা”।
আলোচনার শুরুতে পরিবার বলতে আমরা কি বুঝি তা বলতে গিয়ে আলোচক বলেন, একেবারে শৈশব থেকেই আমরা জানি, মা-বাবা ভাই-বোন দাদা-দাদি সবাইকে নিয়ে হচ্ছে পরিবার। যেহেতু আমরা সবাই কোনো না কোনো পরিবার থেকে এসেছি, আমরা জানি সবার সম্মানজনক অংশীদারীত্ব একটি পরিবারকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। প্রত্যেকের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহনে পরিবার হয়ে উঠে সুন্দর ও প্রানবন্ত। এখন তো দেখি আবার প্রতি বছর বাবা দিবস বা মা দিবস এলে কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়। তা দেখে কেউ কেউ কখনো সখনো চোখের কোনের পানি মোছেন। কিন্তু আমরা চাই, এই অনুভূতি শুধু কোনো দিবসের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তা হোক আজীবনের জন্যে। মা-বাবা সম্পর্কে পরমকরুনাময় কি বলেন? তিনি আমাদের বলেন, “আমি তো সবাইকে তার মা-বাবার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা কষ্টের পর কষ্টস্বীকার করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। আর তাকে বুকের দুধ ছাড়াতে লাগে পুরো দুই বছর। অতএব আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। কারণ আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে।” মায়ের ভূমিকা শুধু গর্ভে ধারণ এবং দুধ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই পৃথিবীর সবকিছুর সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় করিয়েছেন মা। মা-ই সবার প্রথম শিক্ষক। এবং আমরা সবাই জানি এক জন মমতাময়ী মায়ের একান্ত প্রচেষ্টায় টমাস আলভা এডিসন জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী হতে পেরে ছিলেন। এরকম হাজারো উদাহরণ আমরা জানি। পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকার উদাহরণ দিতে গিয়ে আলোচক বলেন, বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম সাখাওয়াৎ কে আমরা পেতাম না- যদি না তাঁর বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের এবং বিয়ের পরে স্বামী সাখাওয়াৎ হোসেনের সহযোগিতা ও উৎসাহ না পেতেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু একবার বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রীরত্নের সহযোগিতা না পেলে বিজ্ঞানের সাধনায় সফল হওয়া কঠিন হতো। আমার কোনো প্রচেষ্টাই আলোর মুখ দেখতো না’। এ ছাড়াও আলোচক আমাদের নবীজীর জীবনে বিবি খাদিজার ভূমিকার কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন। এবং তিনি আরো বলেন, এই যে আজকে আমরা এত বড় হয়েছি, এতটুকু আসতে পেরেছি, এর পিছনে অনেকেরই কম-বেশি অবদান রয়েছে। আজকের মেডিটেশনে আমরা তাদের স্মরণ করার চেষ্টা করব। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলব। যারা বেঁচে নেই তাদের জন্যে দোয়া করব এবং দান করব। আর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার জন্যে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচক বলেন, প্রতিদান আসলে অর্থ বা বস্তূ দিয়ে হয় না। এর জন্যে দরকার একে অপরের প্রতি সমমর্মী হওয়া। একে-অপরের প্রতি বিরক্ত না হওয়া। যারা বয়োজোষ্ঠ বা অসুস্থ আছেন তাদের আন্তরিক সেবা দান করা। পরিবারের কাজে সাধ্য অনুযায়ী সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা। এবং সুযোগ থাকলে কোয়ান্টাম পারিবারিক মেডিটেশনে অংশ গ্রহণ করা। কারণ আমরা যখন পারিবারিক মেডিটেশন করি, তখন একে-অপরকে ক্ষমা করে দেয়া বা ক্ষমা চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে একে-অপরের প্রতি আবার সদ্ভাব সৃষ্টি হয়। সবাই একসাথে থাকার আকুতি সৃষ্টি হয়। আসলে একটি পরিবারে এতগুলো পরিজনের সাথে থাকা-এটি নিঃসন্দেহে একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। সর্বোপরি পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করার আরেকটি বড় উপায় হলো পরিবারকে সৎসঙ্ঘে একাত্ম করা। কারণ আলোকিত জীবনের এই কর্মকাণ্ডগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হলে তাদের জীবন পাল্টে যাবে। তারা খুঁজে পাবেন প্রশান্তি। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া এই প্রশান্তি। তাই আমরা নিজেরা যেমন নিয়মিত সাদাকায়নে আসবো তেমনি তাদেরকেও এই আলোকিত প্রোগ্রামগুলোতে সম্পৃক্ত করব। পরিশেষে আলোচক অতীব সত্যি একটা কথা বলেন, তা হলো- আমি, আপনি, আমরা আসলে আমাদের পরিবারকে অনেক ভালবাসি। আমরাও চাই আমাদের পরিবার ভালো থাকুক, সুখী হোক। এজন্যই পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা প্রকাশের কোনো সুযোগকে আমরা যেন হাতছাড়া না করি। আমাদের জীবনে তাদের অবদানের কথা মনে করে যথাযথ প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা যেন করি। পরমকরুণাময়ের কাছে আমাদের বিনীত প্রার্থনা, আমরা যেন সবসময় পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি এবং তিনি যেন আমাদের সবার পরিবারগুলিকে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে রাখুন। এই বলে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৫টি দেশের ৫৭ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ১৫ফেব্রুয়ারী’২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের জন্যে মেডিটেশন”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।