কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ এপ্রিল’২০২০ শনিবার। করোনা পরিস্থিতির কারণে নিউইয়র্ক শহর লকডাউন থাকায় মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নিউইয়র্ক সময়সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল ইয়র্ক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মেহজাবিন আহমেদ। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক হিসেবে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অংশ নেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি ইউএসএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যাক ইন মোশন লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ডক্টর তাজিয়া সর্দার। আলোচনার বিষয় ছিল : “কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ে পরিবারে ইতিবাচকতার চর্চা“।
আলোচনার শুরুতে ডক্টর তাজিয়া সর্দার বলেন, আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যখন মানুষ দূরে থাকাটাকেই ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ বলে গণ্য করছে। সামাজিক জীব হয়েও এখন আমরা একটা নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলছি। কারণ বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া কোরোনাভাইরাস যে কোন সময় কারো কাছ থেকে যে কোনো কারোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাস যেকোনো স্থানে জীবিত থাকতে পারে। কোনো কিছুই এখন আর নিরাপদ না, এমনকি সহকর্মীরাও। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনি বুলেট দেখতে পারেন, জানতে পারেন যে কে আপনার শত্রু। এখানে যুদ্ধে আছে অদৃশ্য বুলেট। আপনার আশপাশে যেই আসুক না কেন, তিনি অদৃশ্য এই বুলেট নিয়ে আসতে পারেন। সবাই চেষ্টা করছে এই ভাইরাসটির লাগাম টেনে ধরার। যেহেতু এই ভাইরাসের কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি সেহেতু, সবদেশই আশ্রয় নিয়েছে লকডাউন নামের এক কঠিন নিয়মের। সঙ্গত কারণে সবাইকে থাকতে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে অর্থাৎ ঘরে অন্তরীণ অবস্থায়। সময় যাচ্ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। মনে স্থান করে নিয়েছে অনিশ্চয়তার ভয়। পরিবারের দায়িত্ত্বশীল যারা তারা রয়েছেন প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে। ক্রমাগত স্ট্রেস এর কারণে অনেকেই হয়ে উঠছেন অসহিষ্ণু বা রাগান্বিত। পরিবারে একে অপরকে সহ্য করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতির কারণে আমরা বড়রাই যখন আতংকিত তা দেখে পরিবারের কনিষ্ট জনেরা বা কোমলমতি শিশুরা হারাচ্ছে তাদের মনোবল। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা ও উৎকণ্ঠা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের করণীয় সম্পর্কে ডক্টর তাজিয়া সর্দার বলেন, আমাদেরকে ইতিবাচক থেকে পরিবারের ছোট সদস্যদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করতে হবে।
ডক্টর তাজিয়া সর্দার আরো বলেন, আমরা সবাই মিলে কোনো সৃজনশীল কাজ করতে পারি। পরিবারের অন্য সদস্যের কাজে সাহায্য করতে পারি। রান্নার কাজের সহযোগিতা করতে পারি। পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেতে বসতে পারি, যা এত দিন আমরা কর্ম ব্যস্ততার কারণে পারিনি। তিনি আরো বলেন, টিভি, ইন্টারনেটে সময় নষ্ট না করে যার যার কাজে মনোযোগী থাকতে হবে। লম্বা সময় ঘরে থাকার সুযোগকে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত আমাদের জীবনের জন্যে। কারণ মানুষ আসলে খুব কম সময় পায়, সুযোগ পায় এইরকম নির্জন থাকার। একা থাকার। এই সুযোগে নিজেদেরকে শুদ্ধাচারী হওয়ার আহ্ববান জানান আলোচক। এ সময় আমরা পরিবারের সবাই মিলে শুদ্ধাচার এর অনুশীলন করতে পারি। এ ব্যপারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত শুদ্ধাচার বইটির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। বইটি কোয়ান্টামের ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। আমাদের কথাবার্তায় সংযত হতে হবে। পরিবারে শিশু, বয়ষ্ক বা কেউ যদি অসুস্থ থেকে তাদের যথাযথ যত্ন নিতে হবে। তাদের যে কোনো কথায় রাগান্বিত না হয়ে ইতিবাচক থাকতে পরামর্শ দেন আলোচক। কারণ, করোনা একদিন থাকবে না, এটা আমরা কাটিয়ে উঠবোই ইন্শাল্লাহ। কিন্তু আমাদের স্মৃতিতে থেকে যাবে এ সময়কার ভাল কিংবা মন্দ আচরনের ঘটনা গুলি। তাই আমরা আমাদের আপনজনদের প্রতি কি ধরণের আচরণ করছি বা আমরা কতটুকু মানবিক হতে পারছি তা ভেবে দেখা উচিত। সুতরাং আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করবো। এর জন্যে আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিয়মিত মেডিটেশন করবো। কারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অবসানেও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল (১২ মার্চ ২০২০) যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম ও মেডিটেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। তা ছাড়া যারা নিয়মিত মেডিটেশন, প্রাণায়াম ও যোগব্যায়াম চর্চা করেন, তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) অনেক বেশি শক্তিশালী। ফলে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসজনিত রোগের মোকাবেলা করা তাদের জন্যে সহজ হয়। পরিবারের সদস্যরা এবং প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবো। আপনার আমার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে। পরম করুণাময় যেন আমাদের সহায় থাকেন এই কামনা করে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।
আলোচনা শেষে সম্প্রচার করা হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্নধার শ্রদ্ধেয় গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক এর বিশেষ অডিও স্পিচ “সন্তানের কাছ থেকে যা আপনি প্রত্যাশা করেন তা আপনার মা-বাবার জন্যে করুন“। যে খানে ছিল করোনোভাইরাসের এই দুর্যোগের মুহূর্তে সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহব্বান। এবং এই ভাইরাসের মোকাবেলায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে বিশেষ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon অথবা টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে : ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪।
উল্লেক্ষ্য, করোনাভাইরাস (COVID-19) এর কারণে সমস্ত আসন্ন প্রোগ্রাম কেবলমাত্র অনলাইনে চলবে। আগামী শনিবার, ১৮ এপ্রিল’২০২০ সকাল ১০টায় সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনলাইন এ অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহে থাকছে সঙ্কটপূর্ণ এই সময়ের মোকাবেলায় মানসিক দৃঢ়তা অর্জন ও করণীয় বিষয় নিয়ে গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনা। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। মেডিটেশন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে (ইমিউন সিস্টেম) করবে অনেক বেশি শক্তিশালী। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।