কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারী’২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময়সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল ইয়র্ক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মেহজাবিন আহমেদ। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় আলোচক ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল, লিড আইটি বিজনেস এ্যানালিষ্ট জনাব মোঃ রকিবুর রহমান। আলোচনার বিষয় ছিল :“আমি আমারই মতো সুন্দর ! আমি অনন্য !”।
আলোচনার শুরুতে জনাব রকিব বলেন, আমরা কোয়ান্টাম মেডিটেশনে মনে মনে বলি- আমি আমারই মতো সুন্দর ! আমি অনন্য ! আমি আমার অনন্য মেধাকে শত ধারায় বিকশিত করব। অর্পিত মহান দায়িত্ত্ব পালন করব। মেডিটেশনরত অবস্থায় এটি বলার মানে হচ্ছে আমি আমার চেহারাকে বরণ করে নিলাম সেই সাথে মনোযোগ দিলাম আমার অনন্য মেধার দিকে। মেধার সৌন্দর্যও আঁচ করতে শুরু করি আমরা। আমি কি কি পারি, আমার কি আছে যার জন্যে আমাকে শোকরগোজার হতে হবে- এটি উপলদ্ধি করতে শিখি। তারপর নিজের কাছে শপথ গ্রহণ করি যে, আমি আমার অনন্য মেধাকে শত ধারায় মানে যতদিকে মেধাবী হওয়া সম্ভব, হওয়ার চেষ্টা করব, মেধাকে বিকশিত করব। কেন এটা করব? কারণ, আমি পৃথিবীতে যে দায়িত্ব নিয়ে এসেছি, সেই মহান দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি। জীবনে যেন সবদিক দিয়ে ভাল থাকতে পারি। আলোচক এরপর আলোকপাত করেন মানুষের হীনমন্যতাবোধের দিকে।এর কারণেই মানুষ কুশল জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেন , “এই আর কি!” “চলে যাচ্ছে কোনো রকম।” তাহলে আমরা ধরে নিতেই পারি তিনি ভালো নেই। আসলে ভালো না থাকার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। তবে ভালো থাকতে চাইলে নিজের ইচ্ছেটাই আমাদের অনেকখানি সাহায্য করবে। আর ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে যা করতে হবে- আমাদের জীবনের অন্যতম একটি দুষ্টক্ষত ‘হীনম্মন্যতা’ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। আসলে হীনম্মন্যতা হচ্ছে মানুষের অসীম সম্ভাবনার পথে, আত্মবিকাশের পথে এক বড় অন্তরায়। হীনম্মন্যতা দূর হলেই আমরা বলতে পারব- আমি আমারই মতো সুন্দর ! আমি অনন্য ! এরপর আলোচক বলেন, আমাদের জানতে হবে এই হীনম্মন্যতার বাস কোথায়? মনের গভীরে। এটির জন্ম হয় কি করে? ক্রমাগত নেতিচিন্তা করতে করতে। হীনম্মন্যতা কী কী ক্ষতি করে? দুটি প্রধান ক্ষতি যা করে তা হলো- এক, মনোদৈহিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দুই, সাফল্য ও প্রাচুর্যের পথে অলঙ্ঘনীয় প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়। কেউ চেহারা, রং, রূপ নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। কেউ আবার নিজের অযোগ্যতা বা অসমর্থতার কারণে হীনম্মন্য হতে পারেন। সাময়িক ব্যর্থতা ও আমাদেরকে অনেক সময় হীনম্মন্য করে তোলে। খুঁটিনাটি আরো নানা কারণে যেমন কারো রান্না ভালো না, কারো রেজাল্ট ভালো না, কারো পরিচয় দেবার মত ভিজিটিং কার্ড নেই ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে হীনম্মন্যতা আসতে পারে। তবে কারণ যা-ই হোক, এর মূলে রয়েছে- শুকরিয়ার অভাব। অর্থাৎ না-শুকরিয়ার কারণেই আমাদের মধ্যে হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় অশান্তি, অস্থিরতা। একবার কি নেই সেটা নিয়ে চিন্তা শুরু করলে দেখা যাবে তাহলে ‘নেই’ এর কোনো শেষ নেই । একটা পাওয়ার পর মনে হবে আরো অনেককিছুই তো পাওয়ার বাকি থেকে গেল এবং হীনম্মন্যতার এক অনন্ত চক্রে আবর্তন চলতে থাকবে। আবার সাময়িক ব্যর্থতা জীবনে নতুন বাঁক এনে দেয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে আলোচক বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, এনিমেশনের জনক ওয়াল্ট ডিজনি, টমাস আলভা এডিসনের নাম উল্লেখ করেন।যাদের জীবনে সাময়িক ব্যর্থতার কোনো অভাব ছিল না। কোন ব্যর্থতাই তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হতে পারেনি। আসলে সাময়িক ব্যর্থতা কখনোই সাফল্যের পথে অন্তরায় নয়। লক্ষ্যে অবিচল থাকলে, সাফল্য আসবেই। আর এটাই হওয়া উচিত সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। তারপরও কেউ কেউ আমরা এই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানার পরও হীনম্মন্যতায় ভুগি। কারণ, মনের উপর আমাদের দখল কম। অথচ যারা নিজের মনের উপর দখল নিতে পারেন, নিতে পেরেছেন, তারাই সত্যিকারের বীর এবং জয়ী। আমরা পরম করুণাময়ের কাছে শুকরিয়া জানাই যে, মনের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যে আমরা মেডিটেশন শিখছি। যারাই মেডিটেশন করছি, তাদেরকে কেউ কখনো হীনম্মন্যতায় ভুগতে দেখেন না। কারণ, মেডিটেশন এবং হীনম্মন্যতা একসাথে থাকতে পারে না। আর এজন্যেই আমাদের নিয়মিত কোয়ান্টামে আসা, মেডিটেশন করা। এখানে এসে আমরা নিজেকে নতুন করে ফিরে পাই। অমি কে, আমার কী কী আছে, আমাকে আরো কী কী করতে হবে- এ হিসাবনিকাশ করতে পারি খুব সহজেই। বিশ্বাসের সাথে, নিজের জীবনের জন্যে সঠিক সিদ্ধান্ত বেছে নিতে পারি এবং আমরা পরিণত হই শোকরগোজার এক অনন্য মানুষে। পরিশেষে জনাব রকিব বলেন, পৃথিবী আসলে বিশ্বাসী, সাহসী এবং মনের শক্তিকে কাজে লাগাতে সক্ষম মানুষের জন্যই। তাই আসুন, আমরা একবার সবাই বিশ্বাসের সাথে আরো একবার বলি- আমি আমারই মতো সুন্দর ! আমি অনন্য ! আমি আমার অনন্য মেধাকে শত ধারায় বিকশিত করব। অর্পিত মহান দায়িত্ব পালন করব। পরম করুণাময় আমাদের সবার সহায় হোন।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৬টি দেশের ৫৪জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী’২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “সুবচনের চর্চা বাড়াব, ফলে বাড়বে আমার কথার শুভ প্রভাব”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।