কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ ফেব্রুয়ারী’২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল ও ক্যাপিটাল ওয়ান ব্যাংকের সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জনাব মোঃ সাইফুল আলম। বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে সরাসরি অংশ নেন কানাডার টরন্টো থেকে জনাবা শম্পা রায়। আলোচনার বিষয় ছিল :“সুবচনের চর্চা বাড়াব, ফলে বাড়বে আমার কথার শুভ প্রভাব”।
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আলোচক বলেন, গত কাল ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা আন্দোলন দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়। এ বাংলা ভাষাই আমাদের মহান বাঙালি পরিচয় বহন করে। আর ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই প্রয়োজন মাতৃভাষা বাংলাকে সুন্দরভাবে বলতে শেখা। তা না হলে তাদের কাছে আমরা ঋণী থেকে যাব। আজ থেকে ৬৮ বছর আগে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত এবং অন্যান্যরা জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন আমরা যেন বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। আর এখন? বাংলা বলার কারনে তো আমাদের জীবন দিতে হচ্ছে না। বরং সুন্দর করে বাংলা বলতে পারলে প্রশংসা পাই যে, বাহ্, কী সুন্দর করে কথা বলে! আসলে আমাদের ভাষাটাই সুন্দর। এই যে আমরা ছোটকে তুমি, বন্ধুকে তুই এবং বড়দেরকে আপনি বলি, বাংলা ভাষায় এই তিন ধরণের সম্মোধন আমরা ব্যবহার করি। একটি সমৃদ্ধ ভাষার পক্ষেই এটি সম্ভব। তাই বাংলাভাষার যথযথ মর্যাদা রক্ষায় আমরা যেন কথা সুন্দরভাবে বলতে পারি সেই চেষ্টাই করব সবাই। ধর্মবাণীতে নির্দেশনার উদাহরণ দিতে গিয়ে শম্পা রায় বলেন, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন–মানুষের সাথে ভালো কথা বলো। সুন্দর কথা বলো। পবিত্র বেদ-এ সর্বোত্তম সম্পদ হিসেবে বলা হয়েছে – মধুর বচন। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে- যে নিজের ওষ্ঠ সংযত রাখে, সে নিজের জীবনকেই সংরক্ষিত করে। আর যে রূঢ় কথা বলে, সে নিজের সর্বনাশের পথ উম্মুক্ত করে। আমরা যারা কোয়ান্টামে আছি, ২০২০ সালকে আমরা সফল করতে চাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগের বছর হিসেবে। তাই আমরা সচেতনভাবে খেয়াল রাখব, যেন আমাদের মুখ থেকে উচ্চারিত একটি কথায়ও কেউ কষ্ট না পান, আহত না হন, কিংবা তার মনটা বেজার হয়ে যেন না যায়। এ ব্যাপারে আমরা কোয়ান্টাম প্রকাশনার সুবচন কণিকার বাক্যগুলো এবং “শুদ্ধাচার”বইটির সাহায্য নিতে পারি। সুবচন মানে কী? সুবচন মানে যে বচনে মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়। সুবচন মানে যে বচনে সত্য ছাড়া একচুল পরিমাণও মিথ্যা নেই। এ প্রসঙ্গে আলোচক বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ-এর আমলে চীনা দূতদের লিখা বাঙালিদের দুটো গুণের কথা উল্লেখ করে বলেন- এক, বাঙালি মিথ্যা বলে না। দুই, বাঙালি কারো সাথে প্রতারণা করে না। আমাদের পূর্বপুরুষদের এই গুণ ধরে রাখতে আমরাও সত্য বলতে চাই। এবং তিনি আরো বলেন, সুবচন মানে যে বচনে মমতার সুর আছে। সুবচন মানে যে বচনে কারো প্রতি কোনো তাচ্ছিল্য নেই। কোয়ান্টামে আমরা তাই আপনি সম্মোধন করাকে উৎসাহিত করি। আমরা বলি, আপন করে নেয়ার জন্যেই সবাইকে আপনি সম্মোধন করুন। এতে করে সম্পর্কের মাঝে সম্মান থাকবে, মমতা থাকবে, বাড়বে শ্রদ্ধাবোধ। মুখের ভাষার মাধুর্য ধরে রাখতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচক বলেন, আমাদের প্রথম ও প্রধান করণীয় হচ্ছে মনটাকে নির্মল রাখা, মনটাকে প্রশান্ত রাখা। হৃদয়ে মমতা লালন করা। মনের প্রশান্তি মুখের ভাষাকে মধুর ও ছন্দময় করে। হৃদয়ের মমতা মুখের কথা ও হাসিতে ফুটে উঠে। এজন্যে আমাদের ধ্যানী হতে হবে। কারণ, ধ্যান বা মেডিটেশন ছাড়া অন্তরের প্রশান্তি, মনের আনন্দ কিংবা হৃদয়ের মমতা স্থায়ী হয় না। প্রতিদিনের জীবনে জমে থাকা রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, উত্তেজনাকে প্রশমিত করে ধ্যান। আর নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করতে করতে একটা সময় এমন হয় যখন এসব নেতিবাচক আবেগ আর আক্রান্ত করতে পারে না। তাই আমাদের ধ্যানী হতে হবে। সেইসাথে ধ্যানীদের সহবতে থাকতে হবে। কারণ, কার সাথে সময় কাটাচ্ছি, কোন পরিবেশে থাকছি, তা আমাদের কথা ও আচরণকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। এজন্যে আমারা নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়নে আসব। আত্মীয়, বন্ধু, পরিবার পরিজন নিয়ে আসবো। আমরা নিজেদের জন্যে দোয়া করব “প্রভু হে! আমায় সামর্থ দাও উদ্দীপনাময় সুন্দর ওঠা বলার।” এবং আমরা অটোসাজেশন চর্চা করতে পারি যেমনঃ”আমি সুন্দরভাবে কথা বলব। আমার আন্তরিক কথা অন্যদেরকে সহজেই অনুপ্রাণিত করবে।” পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে ভালো কথা ভালোভাবে, হাসিমুখে বলার সামর্থ্য দিন। এই প্রত্যাশা রেখে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৫টি দেশের ৫৭জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী’২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার যত্ন নিন, তাঁদের দোয়াকে গুরুত্ব দিন”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।