কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি, ইউএসএ’র জ্যামাইকাস্থ কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় গত ২৯ ফেব্রুয়ারী’২০২০ শনিবার। নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রোগ্রামের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটির দায়িত্বশীল শাহানা আক্তার । বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অংশ আলোচক ঢাকা ইমম্পেরিয়াল কলেজের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীল জনাব কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। আলোচনার বিষয় ছিল :“বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার যত্ন নিন, তাঁদের দোয়াকে গুরুত্ব দিন”।আলোচনার শুরুতে আলোচক বলেন, আমরা কিছু আলোকিত মানুষ আজ এখানে একত্রিত হয়েছি, যারা জীবনকে খুব ভালবাসি, ভাল থাকতে চাই এবং এ জীবনকে ভবিষ্যতে ভালো রাখতে চাই। সমাজটাকে ভালো রাখতে চাই। এই ভালো থাকা এবং ভালো রাখার প্রথম ইউনিট হচ্ছে পরিবার। পরিবার বলতে আমরা কি বুঝি? শৈশব থেকেই আমরা জানি, মা-বাবা ভাই-বোন দাদা-দাদি সবাইকে নিয়ে হচ্ছে পরিবার। আমরা সবাই কোনো না কোনো পরিবার থেকে এসেছি। এই পরিবারের প্রধান যিনি, যার মাধমে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি তারা হলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় মা-বাবা। কত কষ্ট স্বীকার করে বাবা-মা আমাদেরকে এত বড় করেছেন, তা কখন বুঝা যায়? যখন আমরা নিজেরা মা হই , বাবা হই। এই যে এখন আমরা যেমন সন্তানের জন্যে কষ্ট করছি, আমার বাবা-মাও আমার জন্যে এমন কষ্ট করেছিলেন। একজন মা যে কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন অসুস্থ সন্তানের সেবা করতে গিয়ে, সে কথা আমরা কতটুকুইবা জানি। তাই আমরা আজ প্রতিজ্ঞা করব, আমাদের পরিবারে মা-বাবা বা দাদা-দাদী যারাই আছেন তাদের অবদানের কথা কখনোই ভুলে যাব না। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ রাখবো। তাঁদেরকে কোয়ালিটি সময় দিবো। তাদের যেন অযত্ন না হয় এবং তাদের প্রয়োজনের দিকে যথাযথ খেয়াল রাখবো। আমরা যদি আমাদের বাবা-মায়ের খেয়াল না রাখি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের খেয়াল রাখবে না। কারণ এই শিক্ষাতো তারা আমাদের দেখে শিখে যাচ্ছে। আল্লাহ্তালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমরা যদি সম্পদ ব্যায় করো তার প্রথম হকদার হচ্ছেন তোমার মা-বাবা। কিন্তু অনেক সময় দেখি আমরা অনেকে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্যে খরচকে অপচয় মনে করি। আমরা কি ভেবে দেখেছি, আমরাও একদিন বৃদ্ধ হবো, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। আর রেখে যাব সম্পদ, পরিজন এবং সৎ কর্ম। এর মধ্যে শুধু সৎ কর্ম-ই টিকে থাকবে বহুকাল সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে। একটি হাদিসের কথা উল্লেখ করে আলোচক বলেন, রাসূল (সঃ) একবার বলেছিলেন “সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, পুনরায় অপমানিত হোক, আবারো অপমানিত হোক।” উপস্থিত অনেকে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ) আপনি কার কথা বলছেন? উত্তরে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নিজের বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল আর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। আসলে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবারা অনেকটা শিশুর মত হয়ে যায়। এ সময় আমরা তাদের সাথে মমতার সহিত কথা বলবো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরো বলেন- তোমরা পিতা -মাতার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে, তাদের সাথে উহঃ শব্দটিও ব্যবহার করোনা। ধমকের স্বরে জবাব দিবেনা। আদব ও সম্মানের সাথে কথা বলো। মা-বাবার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে আলোচক বলেন, মা সন্তানের জন্ম দিয়ে তার লালন পালন করতে যে কষ্ট স্বীকার করে তার কোনো প্রতিদান হয় না। আর বাবা যে সবকিছু ম্যানেজ করে পরিবারটিকে সুন্দর করে চালাচ্ছেন তাও প্রতিদান দিয়ে শোধ করার মত নয়। এখন সবাই “হাম দো হামারা ” ছোট হয়ে আসছে পরিবার গুলি। এটা কোনো ভাবেই শুভ লক্ষণ নয়। ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, দাদা-দাদী এই তিন জেনারেশন নিয়েইতো আসলে পরিবার। আমরা নিজেদের মা-বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ত্ব পালন করে উদাহরণ সৃষ্টি করবো। তাহলে আমাদের সন্তানেরা তা দেখে শিখবে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যার সাগর একবার বিপদসংকুল ঝড়ের রাত্রিতে খরস্রোতা নদী সাঁতরিয়ে মায়ের আহ্বানে কর্মস্থল থেকে বাড়ি এসেছিলেন। বায়েজীদ বোস্তামী রহঃ ছেলেবেলায় সারারাত মায়ের শিহরে দাড়িয়ে ছিলেন মাকে পানি পানকরানোর জন্যে। এরকম অনেক উদাহরণ আমরা জানি।
আমাদের করণীয় আলোচক সম্পর্কে বলেন, আমরা নিয়মিত মেডিটেশনে অংশ করবো। কারণ আমরা যখন মেডিটেশন করি, তখন একে-অপরকে ক্ষমা করে দেয়া বা ক্ষমা চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে একে-অপরের সমমর্মিতা সৃষ্টি হয়। সবাই একসাথে থাকার আকুতি সৃষ্টি হয়। তাই আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক সাদাকায়নে অংশ নিব। আমরা যেন সবসময় পরিবারের বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার সঠিক যত্ন নিতে পারি এবং তাদের দোয়া নিয়ে যেন আমাদের সবার পরিবারগুলিকে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তুলতে পারি পরমকরুণাময়ের কাছে এই প্রার্থনা রেখে আলোচক আলোচনা শেষ করেন।
মেডিটেশন, মেডিটেশন সংক্রান্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনা দিয়ে সাজানো এই অনুষ্ঠানে অনসাইট এবং অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আমেরিকার ৭টি স্টেট, কানাডার একাধিক প্রভিন্সসহ মোট ৫টি দেশের /////জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন । আপনিও ঘরে বসে প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে অংশগ্রহণ করতে ভিজিট করুন qms-usa.org/sadakayon.
উল্লেক্ষ্য, আগামী শনিবার, ৭ মার্চ’২০২০ সকাল ১০টায় ৮৬-৪৭ ১৬৪ স্ট্রিট, সুইট # বি ই, ফোন: ৫১৬ ৭৬১ ১৬১৪ জ্যামাইকা, নিউ ইয়র্ক কোয়ান্টাম লার্নিং সেন্টার হল এ সোসাইটির নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন পরবর্তী সাদাকায়ন অনুষ্ঠিত হবে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। আগামী সপ্তাহের আলোচনার বিষয় থাকছে : “পরিবারে সালাম চর্চা বাড়ায় পাস্পরিক একাত্মতা”। রয়েছে মনোযোগ, সচেতনতা, সাফল্য, সুস্বাস্থ্য, ও প্রশান্তি বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া – মেডিটেশন। আরো রয়েছে অসুস্থ ও সমস্যা পীড়িতদের জন্যে হিলিং এবং বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা।